দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ করোনা ভাইরাস সংকট ‘ভালো হওয়ার আগেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে’ বলে এমন সতর্ক করেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
শনিবার যুক্তরাজ্যের প্রতিটি পরিবারকে চিঠি পাঠিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এই বার্তা দেন। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে প্রয়োজনে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে বলেও তিনি ওই চিঠিতে মন্তব্য করেছেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কোভিড -১৯ ধরা পরার পর থেকে তিনি নিজেকে সবার থেকে পৃথক করে রেখেছেন।
ওই চিঠির সঙ্গে প্রত্যেক ব্রিটিশ নাগরিককে, বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত সরকারি নিয়মকানুন ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য সম্বলিত লিফলেটও দেওয়া হয়। দেশটির সরকারি পরামর্শের স্পষ্টতা নিয়ে সমালোচনার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
ব্রিটেনে শনিবার আরও ২৬০ জন মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার কারণে দেশটিতে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বর্তমানে ১,০১৯ জনে পৌঁছেছে।
ব্রিটেনের প্রায় ৩ কোটি পরিবারকে ওই চিঠিটি পাঠাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫৮ লাখ পাউন্ড। চিঠিতে জনসন লিখেছেন: ‘শুরু থেকেই আমরা সঠিক সময় সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করেছিলাম।’
‘বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসা পরামর্শে আমাদের কিছু করতে বললে, আমরা সেটি অবশ্যই করবো।’ চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা জানি পরিস্থিতি ভালো হওয়ার আগে আরও খারাপের দিকেই যাবে’।
‘তবে আমরা সঠিক প্রস্তুতি নিচ্ছি ও আমরা সবাই নিয়ম যতো বেশি মেনে চলবো, ততো কম জীবন হারাবো এবং ততো তাড়াতাড়ি জীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে।’
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও দৈনন্দিন জীবনে যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, সেগুলোর প্রভাব পড়ার আগেই সামনের দুই থেকে তিন সপ্তাহ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকবে বলে মনে করছেন দেশটির বিশেষজ্ঞরা।
বরিস জনসন তার চিঠিতে মহামারিকে ‘জাতীয় জরুরি পরিস্থিতি’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন ও জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা রক্ষা করতে এবং জীবন বাঁচাতে সবাইকে বাড়িতেই থাকতে অনুরোধ করেছেন।
তিনি চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সেবাদানকারীর পাশাপাশি সেইসব লাখ লাখ মানুষ যারা অসহায় মানুষদের সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন তাদের কাজের প্রশংসাও করেছেন।
চিঠির সঙ্গে পাঠানো লিফলেটটিতে হাত ধোয়া সম্পর্কিত দিক নির্দেশনা, করোনা ভাইরাসের লক্ষণগুলির ব্যাখ্যা, বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সরকারি নিয়ম ও অসহায় মানুষদের সহায়তা করা সংক্রান্ত নানা পরামর্শ ওঅন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
অপরদিকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে মানুষের ঘরে থাকতে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার যে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো কার্যকর করতে ৫০০০ পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানাও নির্ধারণ করা হয়েছে।
সর্বোচ্চ জরিমানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে করা হবে। ব্যক্তি পর্যায়ে কেও নিয়ম না মানলে ৯৬০ পাউন্ড জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর চিঠি নিয়ে ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার মেডিকেল পরিচালক শনিবার বলেছেন যে, ভাইরাসটি নিয়ে এখনও দুশ্চিন্তামুক্ত হওয়ার মতো সময় আসেনি।
সরকারের নিয়মিত করোনা ভাইরাস ব্রিফিংয়ে প্রফেসর স্টিফেন পওইস বলেছেন, যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যা ২০,০০০ এর নিচে রাখতে ‘আমাদের প্রত্যেকেই’ ভূমিকা পালন করছে।
ব্যবসা সচিব অলোক শর্মাও ঘোষণা করেছেন যে, ব্যবসায়ীরা করোনা ভাইরাস সংকটের মুখোমুখি হওয়ায় তাদের জন্য নীতি ও বিধি পরিবর্তন করা হবে।
এছাড়া সামনের সারিতে কাজ করা এনএইচএস কর্মীদের সুরক্ষার জন্য মাস্ক, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম-পিপিই সরবরাহের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
এছাড়াও ইংল্যান্ডের হাসপাতালের কর্মীদের করোনা ভাইরাস রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করা শুরু হয়েছে।