দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষ ঘুমোয় আবার পশু-পাখিও ঘুমোয়। তবে এমন একটি গ্রামের সন্ধান পাওয়া গেছে যে গ্রামের মানুষ-পশু হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পড়েন!
আমরা জানি কর্মব্যস্ততা শেষে ক্লান্তি দূর করতে ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। তবে একটি কথা ভাবুন তো, আপনি হাঁটছেন বা মোটরবাইক চালাচ্ছেন এমন অবস্থায় হঠাৎ যদি ঘুমিয়ে পড়েন তাহলে বিষয়টি কেমন হবে? ঠিক এমনটাই ঘটেছে কাজাকিস্তানের কালাচি ও ক্রাসনোগর্স্ক গ্রামে।
এই অঞ্চলটিতে এক সময় প্রায় ১০ হাজার মানুষ বসবাস করতো। এদের বেশির ভাগই রাশিয়ান ও জার্মান উপজাতি। তবে অবাক করার ব্যাপার হলো, সেই এলাকার সবাই যখন তখন হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পড়েন। অবাক করার আরেকটি ব্যাপার হলো, যখন তারা ঘুম হতে ওঠে তখন কিছুই মনে করতে পারে না। তখন তাদের প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হয়। গ্রামবাসী এমনও রয়েছেন যারা বহুবার এ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এমনকি টানা ৬দিন পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন।
গ্রামের বৃদ্ধ, যুবক হতে শিশু সবার ক্ষেত্রেই প্রায় এমন ঘটে থাকে। যে কারণে শিশুরা শেষ পর্যন্ত স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। অনেক শিশুর দৃষ্টিভ্রমও ঘটে।
এলাকার কয়েকটি শিশু বলেছে, তারা পাখাওয়ালা ঘোড়া দেখেছে, বিছানায় সাপ দেখেছে আবার কেও দেখেছে পোকা তাদের হাত খেয়ে ফেলছে!
শুধু মানুষ নয়, ওই গ্রামের পশুরাও ঘুম রোগে আক্রান্ত। ওই কালাচি গ্রামের ইয়েলেনা ঝাভোরনকোভা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তার পোষা বিড়ালটি হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে দেয়। সে দেওয়ালে ও বাড়ির কুকুরকে আক্রমণ করেছে যা আগে কখনও ঘটেনি। সকালের দিকে বিড়ালটি হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত মানুষের মতো নাক ডেকে ঘুমিয়েছিল বিড়ালটি।
চিকিৎসকরা আক্রান্তদের শরীর পরীক্ষা করে দেখেছেন। চিকিৎসকরা মনে করেন, বিষয়টির ব্যাখ্যা অবশ্যই রয়েছে। প্রথমে তারা মনে করেছিলেন, ভদকা পানের পর এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে এমনটা হচ্ছে। তবে বিষয়টি বাড়তে থাকলে তারা মনে করেন এটি মস্তিষ্কের কোনো রোগ।
এই এলাকায় একটি ইউরেনিয়াম কারখানা রয়েছে। এই কারখানাটি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পরই বন্ধ হয়ে যায়। ক্রাসনোগর্স্ক এলাকায় এক সময় ৬ হাজারের অধিক মানুষের বসবাস ছিল তবে এখন সেখানে ১ হাজার মানুষও নেই।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, কাজাকিস্তান হেলথ মিনিস্ট্রির আশপাশের ৭ হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে উচ্চ মাত্রায় রেডিয়েশন কিংবা অন্য কোনো পদার্থ পাওয়া যায়নি। কিছু বাড়িতে অবশ্য রেডিয়াম পাওয়া যায়, তবে সেটি তেমন গুরুতর নয়।
স্লিপ ডিসওর্ডার বিশেষজ্ঞরাও বিষয়টির কারণ খুঁজতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে এখন এই রহস্য উন্মোচন হয়েছে ও ইউরেনিয়ামের কারণেই যে এমনটা ঘটছে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে জানিয়েছেন কাজাকিস্তানের ডেপুটি পিএম বারডিবেক সাপারবেভ।
ওই এলাকায় বসবাসকারীদের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, বাতাসে উচ্চমাত্রায় কার্বন মনোঅক্সাইড ও হাইড্রোকার্বন থাকায় যখন তখন ঘুমিয়ে পড়ার মতো এমন ঘটনা ঘটছে।