দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রাসায়নিক ব্যবহার নিয়ে গবেষণাটি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ হেলথ, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল হেলথ, কেমসেকসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী।

এই গবেষণায় বলা হয়, ফথালেটস, বিশফেনলস, পেস্টিসাইডস ও পিফাস ‘ফরেভার কেমিক্যালস’-এর কারণে খাদ্যদ্রব্য বিষে পরিণত হচ্ছে
বিশ্ব জুড়েই খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য। এইসব রাসায়নিক মানবস্বাস্থ্য এবং বৈশ্বিক কৃষি ব্যবস্থার জন্য মারাত্মকভাবে হুমকি হয়ে উঠছে। সে কারণে হতে পারে ক্যান্সার, নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ক্ষতি, স্থূলতা এবং ডায়াবেটিস। এ ছাড়াও হরমোনজনিত (এন্ডোক্রাইন) সমস্যা বিশেষত বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টিতেও প্রভাব রাখছে এইসব দ্রব্য।
রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং রোগব্যয় বছরে ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ( ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। সেইসঙ্গে ২১ শতকে বিশ্বব্যাপী শিশু জন্মহার ব্যাপকভাবে কমবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। গবেষণাটি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ হেলথ, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল হেলথ, কেমসেকসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীগণ। নেতৃত্ব দিয়েছে সিস্টেমিক নামে একটি সংস্থার মূল গবেষক দল, যারা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করে থাকে। বুধবার গবেষণার তথ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, ফথালেটস (প্লাস্টিককে নরম, নমনীয় এবং টেকসই ও খাদ্য প্যাকেজিং করতে ব্যবহৃত রাসায়নিক), বিশফেনলস (প্লাস্টিক এবং রেজিন তৈরির একটি প্রধান রাসায়নিক), পেস্টিসাইডস (কৃষিক্ষেত্রে পোকামাকড়, আগাছা এবং রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত রাসায়নিক) এবং পিফাস ‘ফরেভার কেমিক্যালস’-এর কারণে বিশ্বের খাদ্যদ্রব্য শেষ পর্যন্ত বিষে পরিণত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয় যে, বিশ্বে বর্তমান মাত্রায় এইসব রাসায়নিকের ব্যবহার অব্যাহত থাকলে ২০২৫ থেকে ২১০০ সালের মধ্যে ২০ থেকে ৭০ কোটি নতুন শিশুর জন্ম কমে যাবে। গবেষণা বলছে যে, এইসব রাসায়নিক শুধু রোগই বাড়াচ্ছে না বরং পরিবেশ এবং কৃষির ওপরও ব্যাপক ক্ষতিও ডেকে আনছে। কৃষিতে উৎপাদনহানি ও পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পিফাস এবং কীটনাশকের কারণে অতিরিক্ত ব্যয় দাঁড়াতে পারে আরও ৬৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হতে বিশ্বে রাসায়নিক উৎপাদন ২০০ গুণ বেড়েছে ও বর্তমানে বাজারে ৩.৫ লাখের বেশি সিন্থেটিক রাসায়নিকও ব্যবহৃত হচ্ছে। এদের মধ্যে খুব অল্প কিছু রাসায়নিকের ঝুঁকি নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্যও রয়েছে, বাকিগুলোর প্রভাব এখনও অজানা। বিশ্বখ্যাত শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক ড. ফিলিপ ল্যানড্রিগান এই পরিস্থিতিকে ‘ওয়েক-আপ কল’ হিসেবেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে, “বিশ্বকে রাসায়নিক দূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই হবে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বড় হুমকি। শিশুদের বিকাশমান মস্তিষ্কে এইসব রাসায়নিক ভয়াবহ ক্ষতি করে বুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতা এবং আজীবন উৎপাদনশীলতাও কমিয়ে দেয়।’
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org