দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশে মোটামুটি একটা সাইকেল বিপ্লব ঘটে গেছে। অনেক জায়গায় তরুণেরা দল বেঁধে সাইকেল চালায়। অনেকগুলো সাইক্লিং ক্লাব তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা কমবেশি সবাই সাইকেল চালিয়েছি। কেউ সখে, কেউ প্রয়োজনে। তবে সাইক্লিং এর উপকার সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই। জানলে স্পষ্ট বুঝা যাবে সাইক্লিং এর প্রয়োজনীয়তা। চলুন জেনে নিই, সাইক্লিং আমাদের কি উপকার করবে…
মেদ কমায়ঃ
আর্কাইভস অব পেডিয়েড্রিকস অ্যান্ড এডোলিসেন্ট মেডিসিন নামক জার্নালের একটি সংখ্যায় তথ্য দেওয়া হয়েছে, নিয়মিত সাইকেল চালালে মোটা লোকদের স্বাভাবিক ওজন ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা ৮৫ শতাংশ। পক্ষান্তরে যারা তাদের কর্মস্থলে গাড়িতে চড়ে যান তাদের মোটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি, প্রায় ৬১ শতাংশ। এই তথ্যগুলো সাইক্লিং এর কার্যকারিতা পরিষ্কার ভাবেই নির্দেশ করছে। নিয়মিত সাইকেল চালালে অতিরিক্ত মেদ কমে শরীর সুস্থ থাকে। আর যাদের ওজন স্বাভাবিক তাদের ওজন বাড়ার সম্ভাবনাও যথেষ্ট কম থাকে। বৃটিশ জার্নাল অব স্পোর্টস মেডিসিনের এক গবেষণায় বলা হয়, ঘণ্টায় ২০ কিমি. গতিতে সাইকেল চালালে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০ ক্যালরি শক্তি খরচ হয়। এই বিপুল শক্তি খরচ হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই ওজন কমে আসে।
হৃদরোগের সম্ভাবনা কমেঃ
নিয়মিত সাইকেল চালালে হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস এবং রক্তচাপের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে। শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাই হার্ট ভালো থাকে। ওজন কমার পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান কমে, ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। এতে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমে। সপ্তাহে ৩৫ কিলোমিটার সাইকেল চালালেই করোনারি হূদরোগের সম্ভাবনা কমে যায় ৫০ শতাংশেরও বেশি।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমেঃ
নিয়মিত সাইকেল চালালে রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং শরীরের ওজন সঠিক পর্যায়ে থাকায় টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
পেশী গঠনে সহায়কঃ
সাইক্লিং একটি উত্তম ব্যায়াম কেননা এতে শরীরের সকল অঙ্গের নড়াচড়া হয়। নিয়মিত সাইকেল চালানো নিন্মাঙ্গের উরু, কাফ ও পিঠের পেশি মজবুত হয়। এতে উরু, কাফ ও নিতম্ব সুগঠিত হয়। এছাড়া জানু সন্ধি এবং পায়ের অন্যান্য সন্ধি সবল হয়। আর্থাইটিস হওয়ার সম্ভাবনাও কমে।
ত্বকের জন্য ভালঃ
সাইকেল চালানোর সময় শরীর বেশ ঘামে। ঘামের সাথে শরীরের বর্জ্য বের হয়ে যায়। এতে ত্বক ও শরীর সুস্থ থাকে।
মানসিক প্রফুল্লতাঃ
সাইক্লিং মনে প্রফুল্ল ভাব আনে। সাইকেল চালালে রক্তে নিঃসরণ হয় ভালো লাগার হরমোন এন্ডোরফিন। তাই মুক্ত বাতাসে সাইকেল চালালে মনে প্রশান্তি আসে, মন ভালো লাগে। এন্ডোরফিন স্ট্রেসও কমায়। শিশু সাইকেল চালালে তার আত্মবিশ্বাস বাড়ে। সাইকেল চালানো তাই শিশুর সার্বিক বিকাশে সহায়ক।
চলুন, এক নজরে দেখে নিই সাইক্লিং এর উপকারিতাঃ
- সুস্থ থাকতে সাহায্য করে
- মেদ কমায়
- ক্ষুধা বাড়ায়
- শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য উপকারী
- শক্তি জোগায়
- বার্ধক্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- মানসিক প্রফুল্লতা আনে
- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস সহ অনেক রোগ প্রতিরোধ করে
এতসব উপকার থাকায় আমাদের অবশ্যই সাইক্লিং করা উচিৎ। যে যেভাবে পারেন সাইক্লিং করুন। অন্যান্য দেশে অনেক আগে থেকে ব্যাপারটি মানুষ জেনে গেছে। বাংলাদেশে সম্প্রতি সাইক্লিং এর জোয়ার শুরু হয়েছে। আপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, যাতায়াতে সাইকেল ব্যবহার করুন। অন্তত প্রতিদিন কিছুটা হলেও সাইকেল চালান। এটি আপনাকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে। তবে রাস্তায় খুবই সাবধানে সাইকেল চালাবেন। দুর্ঘটনা রোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রেখে চলুন।